বানর ও কুমির


এক বানর ও এক কুমিরের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব জমে উঠল। বানরটি বাস করত নদীর ধারের একটি আমগাছে। আর কুমির থাকত নদীতে। তারা প্রায়ই হাসি-ঠাট্টায় মশগুল থাকত। আমের মওসুমে বানরটি গাছের ওপর থেকে কুমিরের জন্যে নদীতে আম ছুড়ে মারত। কুমিরটি শুধু একা নিজে খেত না, কিছু আম তার স্ত্রীর জন্যে নদীর অপর পারের বাসায়ও নিয়ে যেত। একদিন কুমিরের স্ত্রী স্বামীকে বলল, ‘আজ সন্ধ্যায় তোমার বানর-বন্ধুকে বাসায় নিয়ে এসো। তাকে দেখতে বড়ই ইচ্ছে করছে।’

কুমির প্রশ্ন করল, ‘হঠাত্ অমন ইচ্ছে কেন হলো বউ?’

বউ বলল, ‘সত্যি কথা বলতে কী, ওটা আমার বেশ উপাদেয় খাবার হবে।’

কুমির চেঁচিয়ে বলল, ‘কী সব বাজে বকছ তুমি? আমার বন্ধু কেন তোমার খাবার হতে যাবে?’

স্ত্রী-কুমির মৃদুস্বরে জবাব দিল, ‘নানা মুখে শুনতে পেয়েছি বানরের কলিজা নাকি খুবই সুস্বাদু।’

কুমির বলল, ‘অসম্ভব ব্যাপার আমি কিভাবে একজন বন্ধুকে বাড়িতে দাওয়াত করে এনে হত্যা করতে পারি?’

তবুও স্ত্রী-কুমির অনবরত পীড়াপীড়ি করতে করতে স্বামীকে অতিষ্ঠ করে তুলল। অবশেষে কুমির স্ত্রীর অপ্রিয় অনুরোধে সায় দিল।

কুমির নদীর ওপারে বানরের কাছে গিয়ে অতি বিনয়ের সুরে বলল, ‘বন্ধু আমার স্ত্রী তোমাকে বাড়িতে দাওয়াত করেছে। চল আমার সঙ্গে।’

বানর ততোধিক বিনয়ের সঙ্গে বলল, ‘এটা তো আমার জন্য পরম খুশির বিষয়।’ সে তখনই কুমিরের পিঠে চড়ে বসল।

কুমির বানরকে পিঠে নিয়ে সাঁতরে ওপারের বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। সে মাঝনদীতে পৌঁছে বানরকে বলল, ‘বন্ধু, আমার স্ত্রীর বড়ই সাধ হয়েছে তোমার হূিপণ্ড খাওয়ার। আসলে সে কারণেই তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে হচ্ছে।’

বানর মৃদু হেসে বলল, ‘বাহ, আমার বন্ধুর স্ত্রীর কাজে লাগা তো আমার জন্যে পরম সৌভাগ্যের বিষয়। আমার সামান্য হূিপণ্ডটি তোমাদের সেবায় নিবেদন করলাম। তবে দুঃখের বিষয় হলো, আমি যে আমার হূিপণ্ডটা আমগাছে রেখে এসেছি। চল, ফিরে গিয়ে ওটি নিয়ে আসি।’

অতঃপর কুমির বানরকে নিয়ে পেছনে ফিরে আবার আমগাছের উদ্দেশে রওয়ানা হলো। তীরের কাছে আসতেই বানরটি এক লাফে আমগাছে চড়ে বসল। সে কুমিরকে উপহাস করে বলল, ‘তোমার প্রিয় স্ত্রীকে  বোলো আজ সন্ধ্যায় আমার হূিপণ্ডের বদলে একটি সুস্বাদু পিঠা বানিয়ে খেয়ে নিতে।’

প্রাচীন ভারতীয় উপকথা অবলম্বনে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পেটুক – সুকুমার রায়