পোস্টগুলি

শিক্ষামূলক গল্প: রাজা ও হরিণের প্রেম

ছবি
এক রাজা একদিন বাঘ শিকারের জন্য গেলেন বনে। সারা দিন তিনি এক গাছের উপর মাচা পেতে তীর-ধনুক নিয়ে বসে বাঘ শিকারের জন্য— দিন কেটে যায় বাঘের দেখা মেলে না। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকাল। ঠিক সূর্যটা যখন পশ্চিমে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে তখন রাজা খেয়াল করলেন একটা সুন্দর হরিণ ছুটে পালাচ্ছে। হরিণটাকে খাওয়ার জন্য তাড়া করেছিল একটা বাঘ। রাজা এত সুন্দর একটা হরিণ দেখে যতটা না মুগ্ধ তার চাইতে বেশী রাগান্বিত হলেন ওই সুন্দর হরিণটাকে বাঘে খেতে যাচ্ছে তা দেখে। রাজা তার ধনুকে তীর লাগিয়ে এক নিশানায় বাঘটিকে কুপোকাত করলেন। নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য হরিণটি রাজার নিকট এসে কুর্ণিশ করে বলল, ‘মহারাজ আজ আপনি প্রমাণ করলেন আপনি শুধু মাত্র মানুষের রাজা নন, তাদের অভিভাবক নন, আমাদের মতো বনের অসহায় প্রাণীদেরও অভিভাবক, আমাদের রাজা। আপনার প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ।’ রাজা হরিণটার সৌন্দর্য্য দেখে আরও মুগ্ধ হলেন। তারপর হরিণকে বললেন, ‘আমার রাজ্যে সকল মানবকুল যেমনটা স্বাধীন, ঠিক বনের সকল প্রাণীও আজ থেকে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে চলবে।’ রাজার এমন ঘোষণায় বনের সকল প্রাণী আনন্দে আন্দোলিত হল। রাজা রাজ প্রাসাদে ফিরে গেলেন। কিন্তু তার চোখে শুধু...

পান্তাবুড়ির কথা – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

ছবি
মোঃ আসাদুজ্জামান — August 31, 2022 পান্তাবুড়ির কথা - উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এক যে ছিল পান্তাবুড়ি, সে পান্তাভাত খেতে বড্ড ভালোবাসত। এক চোর এসে রোজ পান্তাবুড়ির পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই বুড়ি লাঠি ভর দিয়ে রাজার কাছে নালিশ করতে চলল। পান্তাবুড়ি পুকুর ধার দিয়ে যাচ্ছিল। একটা শিঙিমাছ তাকে দেখতে পেয়ে বললে,‘ পান্তাবুড়ি, কোথায় যাচ্ছ?’ পান্তাবুড়ি বললে, ‘চোরে আমার পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই রাজার কাছে নালিশ করতে যাচ্ছি!’ শিঙিমাছ বললে, ‘ফিরে যাবার সময় আমাকে নিয়ে যেও, তোমার ভালো হবে।’ পান্তাবুড়ি বললে, ‘আচ্ছা।’ তারপর পান্তাবুড়ি বেলতলা দিয়ে যাচ্ছে। একটা বেল মাটিতে পড়ে ছিল, সে বললে, ‘পান্তাবুড়ি কোথায় যাচ্ছ?’ পান্তাবুড়ি বললে, ‘চোরে আমার পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই রাজার কাছে নালিশ করতে যাচ্ছি।’ বেল বললে, ‘ফিরে যাবার সময় আমাকে নিয়ে যেও, তোমার ভালো হবে।’ পান্তাবুড়ি বললে, ‘আচ্ছা।’ তারপর পান্তাবুড়ি পথের ধারে খানিকটা গোবর দেখতে পেলে। গোবর বললে, ‘পান্তাবুড়ি, কোথায় যাচ্ছ?’ পান্তাবুড়ি বললে, ‘চোরে আমার পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই রাজার কাছে নালিশ করতে যাচ্ছি।’ গোবর বললে, ‘ফিরে যাবার সময় আ...

সুকুমার রায়ের গল্প – হিংসুটি

ছবি
এক ছিল দুষ্টু মেয়ে— বেজায় হিংসুটে , আর বেজায় ঝগড়াটি। তার নাম বলতে গেলেই তো মুশকিল, কারণ ঐ নামে শান্ত লক্ষ্মী পাঠিকা যদি কেউ থাকেন, তাঁরা তো আমার উপর চটে যাবেন।হিংসুটির দিদি বড় লক্ষ্মী মেয়ে— যেমন কাজে কর্মে, তেমনি লেখাপড়ায়। হিংসুটির বয়েস সাত বছর হ’য়ে গেল, এখনও তার প্রথম ভাগই শেষ হল না— আর তার দিদি তার চাইতে মোটে এক বছরের বড়, সে এখনই “বোধোদয়” আর “ছেলেদের রামায়ণ” পড়ে ফেলেছে, ইংরিজি ফার্স্টবুক তার কবে শেষ হয়ে গেছে। হিংসুটি কিনা সবাইকে হিংসে করে, সে তো দিদিকেও হিংসে করত। দিদি স্কুলে যায়, প্রাইজ পায়— হিংসুটি খালি বকুনি খায় আর শাস্তি পায়। দিদি যেবার ছবির বই প্রাইজ পেলে আর হিংসুটি কিচ্ছু পেলে না, তখন যদি তার অভিমান দেখতে! সে সারাটি দিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে গাল ফুলিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে ব’সে রইল— কারও সঙ্গে কথাই বলল না। তারপর রাত্রিবেলায় দিদির অমন সুন্দর বইখানাকে কালি ঢেলে, মলাট ছিঁড়ে, কাদায় ফেলে নষ্ট করে দিল। এমন দুষ্টু হিংসুটে মেয়ে।হিংসুটির মামা এসেছেন, তিনি মিঠাই এনে দু’বোনকেই আদর ক’রে খেতে দিয়েছেন। হিংসুটি খানিকক্ষণ তার দিদির খাবারের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভ্যাঁ ক’রে কেঁদে ফে...

বোকা কুমিরের কথা – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

ছবি
কুমির আর শিয়াল মিলে চাষ করতে গেল। কিসের চাষ করবে? আলুর চাষ। আলু হয় মাটির নীচে। তার গাছ থাকে মাটির উপরে, তা দিয়ে কোনো কাজ হয় না। বোকা কুমির সে কথা জানতো না। সে ভাবলে বুঝি আলু তার গাছের ফল। তাই সে শিয়ালকে ঠকাবার জন্য বললে, ‘গাছের আগার দিক কিন্ত আমার, আর গোড়ার দিক তোমার।’ শুনে শিয়াল হেসে বললে, ‘আচ্ছা তাই হবে।’ তারপর যখন আলু হল,  কুমির  তখন সব গাছের আগা কেটে তার বাড়িতে নিয়ে এল। এনে দেখে, তাতে একটিও আলু নেই। তখন সে মাঠে গিয়ে দেখল, শিয়াল মাটি খুঁড়ে সব আলু তুলে নিয়ে গেছে। কুমির ভাবলে, ‘তাই তো। এবার বড্ড ঠকে গিয়েছি। আচ্ছা, আসছে বার দেখব!’ তার পরের বার হল ধানের চাষ। এবার কুমির মনে ভেবেছে, আর কিছুতেই ঠকতে যাবে না। তাই সে আগে থাকতেই শিয়ালকে বললে, ‘ভাই, এবারে কিন্ত আমি আগার দিক নেব না, এবার আমাকে গোড়ার দিক দিতে হবে।’ শুনে শিয়াল হেসে বললে, ‘আচ্ছা তাই হবে!’ তারপর যখন ধান হল, শিয়াল ধানসুদ্ধ গাছের আগা কেটে নিয়ে গেল। কুমির তো এবারে ভারি খুশি হয়ে আছে। ভেবেছে, মাটি খুঁড়ে সব ধান তুলে নেবে। ও কপাল! মাটি খুঁড়ে দেখে সেখানে কিছুই নেই। লাভের মধ্যে খড়গুলো পেলো। তখন কুমির তো বড্ড চটেছে, আর ব...

পেটুক – সুকুমার রায়

ছবি
“হরিপদ! ও হরিপদ!” হরিপদর আর সাড়াই নেই! সবাই মিলে এত চ্যাঁচাচ্ছে, হরিপদ আর সাড়াই দেয় না। কেন, হরিপদ কালা নাকি? কানে কম শোনে বুঝি? না, কম শুনবে কেন—বেশ দিব্যি পরিষ্কার শুনতে পায়। তবে হরিপদ কি বাড়ি নেই? তা কেন? হরিপদর মুখ ভরা ক্ষীরের লাডু, ফেলতেও পারে না, গিলতেও পারে না। কথা বলবে কি করে? আবার ডাক শুনে ছুটে আসতেও পারে না—তাহলে যে ধরা পড়ে যাবে। তাই সে তাড়াতাড়ি লাড়ু গিলছে আর জল খাচ্ছে, আর যতই গিলতে চাচ্ছে ততই গলার মধ্যে লাড়ুগুলো আঠার মতো আটকে যাচ্ছে। বিষম খাবার যোগাড় আর কি! এটা কিন্তু হরিপদর ভারি বদভ্যাস। এর জন্য কত ধমক, কত শাসন, কত শাস্তি, কত সাজাই যে সে পেয়েছে,ও তবু তার আক্কেল হল না। তবু সে লুকিয়ে চুরিয়ে পেটুকের মতো খাবেই। যেমন হরিপদ তেমনি তার ছোট ভাইটি। এদিকে পেট রোগা, দুদিন অন্তর অসুখ লেগেই আছে, তবু হ্যাংলামি তার আর যায় না। যেদিন শাস্তিটা একটু শক্ত রকমের হয় তারপর কয়েক দিন ধরে প্রতিজ্ঞা থাকে, ‘এমন কাজ আর করব না’। যখন অসময়ে অখাদ্য খেয়ে, রাত্রে তার পেট কামড়ায়, তখন কাঁদে আর বলে, “আর না, এইবারেই শেষ”। কিন্তু দুদিন না যেতেই আবার যেই সেই। এই তো কিছুদিন আগে পিসিমার ঘরে দই খেতে গিয়ে তারা জব্দ হয়ে...
ছবি
অনুপ্রেরণা....  সেই আদি আমল থেকে কচ্ছপ আর খরগোশের গল্প আমরা সবাই জানি। কিন্তু মজার বিষয় হল আমরা ১ম অধ্যায়টাই বেশি শুনেছি। কিন্তু এই গল্পের আরো ৩ টি অধ্যায় আছে। যা হয়তো আমরা কেউ শুনেছি, কেউ শুনিনি। ১ম অধ্যায়ঃ এই অধ্যায়ে খরগোশ ঘুমিয়ে যায়, আর কচ্ছপ জিতে যায়। প্রথমবার হেরে যাওয়ার পর খরগোশ বিশ্লেষণ করে দেখল তার পরাজয়ের মূল কারণ 'অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস।' তার মানে অতি আত্মবিশ্বাস যে কারো জন্যই ক্ষতিকর। আর কচ্ছপ বুঝল, লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই! ২য় অধ্যায়ঃ হেরে যাওয়ার পর এবার খরগোশ আবারো কচ্ছপকে দৌড় প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জ করল আর কচ্ছপও রাজী হল। এবার খরগোশ না ঘুমিয়ে দৌড় শেষ করল এবং জয়ী হল। খরগোশ বুঝল, মন দিয়ে নিজের সামর্থের পুরোটা দিয়ে কাজ করলে দ্রুত সফল হওয়া যায়। আর কচ্ছপ বুঝল, ধীর স্থিরভাবে চলা ভালো, তবে কাজে উপযুক্ত গতি না থাকলে প্রতিযোগীতামূলক পরিবেশে জয়ী হওয়া অসম্ভব! ৩য় অধ্যায়ঃ কচ্ছপ এবার খরগোশকে আরেকবার দৌড় প্রতিযোগিতার আমন্ত্রন জানালো। খরগোশও নির্দ্বিধায় রাজী হয়ে গেল। তখন কচ্ছপ বলল, "একই রাস্তায় আমরা ২ বার দৌড়েছি, এবার অন্য রাস্তায় হোক।" খরগোশও রাজী...
ছবি
আমাদের পোস্টাপিসের বড়বাবুর বেজায় গল্প করিবার সখ। যেখানে সেখানে সভায় আসরে নিমন্ত্রণে, তিনি তাঁহার গল্পের ভাণ্ডার খুলিয়া বসেন। দুঃখের বিষয়, তাঁর ভাণ্ডার অতি সামান্য— কতগুলি বাঁধা গল্প, তাহাই তিনি ঘুরিয়া ফিরিয়া সব জায়গায় চালাইয়া দেন। কিন্তু একই গল্প বারবার শুনিতে লোকের ভাল লাগিতে কেন? বড়বাবুর গল্প শুনিয়া আর লোকের হাসি পায় না। কিন্তু তবু বড়বাবুর উৎসাহও তাহাতে কিছুমাত্র কমে না। সেদিন হঠাৎ তিনি কোথা হইতে একটা নূতন গল্প সংগ্রহ করিয়া, মুখুজ্জেদের মজ্‌লিসে শুনাইয়া দিলেন। গল্পটা অতি সামান্য কিন্তু তবু বড়বাবুকে খাতির করিয়া সকলেই হাসিল। বড়বাবু তাহা বুঝিলেন না, তিনি ভাবিলেন গল্পটা খুব লাগসই হইয়াছে। সুতরাং, তার দুদিন বাদে যদু মল্লিকের বাড়ি নিমন্ত্রণে বসিয়া, তিনি খুব আড়ম্বর করিয়া আবার সেই গল্প শুনাইলেন। দু-একজন যাহারা আগে শোনে নাই, তাহারা শুনিয়া বেশ একটু হাসিল। বড়বাবু ভাবিলেন গল্পটা জমিয়াছে ভাল। তারপর ডাক্তারবাবুর ছেলের ভাতে তিনি আবার সে গল্পই খুব উৎসাহ করিয়া শুনাইলেন। এবারে ডাক্তারবাবু ছাড়া আর কেহ গল্প শুনিয়া হাসিল, না, কিন্তু বড়বাবু নিজেই হাসিয়া কুটি কুটি। তারপরেও যখ...

বাঘের উপর টাগ – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

ছবি
এক জোলা ছিল” তার একটি বড় আদুরে ছেলে ছিল। সে যখন যা চাইত, সেটি না নিয়ে কিছুতেই ছাড়ত না। একদিন এক বড়মানুষের ছেলে জোলার বাড়ির সামনে দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছিল। তাকে দেখে জোলার বড় ছেলে তার বাপকে ডেকে বললে, ‘বাবা, আমার কেন ঘোড়া নেই? আমাকে ঘোড়া এনে দাও।’ জোলা বললে, ‘আমি গরীব মানুষ, ঘোড়া কি করে আনব? ঘোড় কিনতে ঢের টাকা লাগে।’ ছেলে বললে, ‘তা হবে না। আমাকে ঘোড়া এনে দিতেই হবে।’ বলে, সেই ছেলে আগে নেচে-নেচে কাঁদল, তারপর গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদল, তারপর উঠে তার বাপের হুঁকো কলকে ভেঙ্গে ফেলল। তাতেও ঘোড়া কিনে দিচ্ছে না দেখে, শেষে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিল। তখন জোলা ত ভারি মুশকিলে পড়ল। ছেলে কিছুতেই খাচ্ছে না দেখে সে ভাবল, ‘এখন তো ঘোড়া কিনে না দিলেই হচ্ছে না। দেখি ঘরে কিছু টাকা আছে কি না।’ অনেক খুঁজে সে কয়েকটি টাকা বার করল। তারপর সেই টাকা কাপড়ে বেঁধে সে ঘোড়া কিনতে হাটে চলল। হাটে গিয়ে জোলা ঘোড়াওয়ালাকে জিগগেস করল, ‘হাঁ গা, তোমার ঘোড়ার দাম ক-টাকা?’ ঘোড়াওয়ালা বললে, ‘পঞ্চাশ টাকা।’ জোলা কাপড়ে বেঁধে মোটে পাঁচটি টাকা এনেছে, পঞ্চাশ টাকা সে কোথা থেকে দেবে? কাজেই সে ঘোড়া কিনতে না পেরে মনের দুঃখে বাড়ি ফিরে চ...

যেমন রোগ তেমন দাওয়াই

ছবি
যেমন রোগ তেমন দাওয়াই – নাসিরুদ্দীন হোজ্জা যেমন রোগ তেমন দাওয়াই: এক দম্পতি। ভীষণ স্বাপ্নিক তারা। এই দিবা স্বপ্নের ঘোরে থাকা দম্পতির প্রতিবেশী আবার আর কেউ নয়, স্বয়ং নাসিরুদ্দীন হোজ্জা। একদিন এই দম্পতি দিবা স্বপ্নকে প্রায় বাস্তব বানিয়ে ফেলল। স্বামী বলছিলঃ টাকা পেলেই একটা দুধেল গাই কিনবো।স্ত্রী বললো : সে দারুণ হবে গো। ম্যালা ভাণ্ডও লাগবে, যাই দামদর করে কিনে ফেলিগে। এসব ব্যাপারে দেরি করা কোন কাজের কথা না। যেই ভাবা সেই কাজ। বউ বাজারে যেয়ে পাঁচখানা পেল্লায় ভাণ্ড কিনে আনে। স্বামী সুধায় (জানতে চায়) : কি কিনলে? স্ত্রী : পাঁচখানা ভাণ্ড। একটায় দুধ রাখবো, একটায় ঘোল, একটায় মাখন আর একটাতে ঘি।স্বামী : আর একখানা ভাণ্ড যে থাকলো, ওতে কি হবে? স্ত্রী : ইয়ে, এই আর কি, ধর যদি দুধ বেঁচে যায়, তো আমার মায়ের বাড়িতে দেব। স্বামী : কি বললে, মায়ের বাড়িতে দেবে? কি সব্বোনাশ। এভাবে তো আমার সংসার লাটে উঠবে। তা, বলি চুরি করে কতদিন ধরে এভাবে মায়ের বাড়িতে দুধ পাঠানো হচ্ছে। আমি জানি না, আর আমার সংসারের লোপাট হয়ে যাচ্ছে! স্ত্রী : আমি গরুকে ঘাস খাওয়াব, দুধও দুয়াবো। আর মায়ের বাড়িতে এক ভাণ্ড দুধ পাঠাতে ...

ব্যাঙের সমুদ্র দেখা – সুকুমার রায়

ছবি
মোঃ আসাদুজ্জামান — January 22, 2022 ব্যাঙের সমুদ্র দেখা - সুকুমার রায় গ্রামের ধারে কবেকার পুরান এক পাতকুয়োর ফাটলের মধ্যে কোলাব্যাং তার পরিবার নিয়ে থাকত। গ্রামের মেয়েরা সেখানে জল তুলতে এসে যেসব কথাবার্তা বলত কোলাব্যাং তার ছেলেদের সেইসব কথা বুঝিয়ে দিত—আর ছেলেরা ভাবত ‘ইস্‌! বাবা কত জানে!’ একদিন সেই মেয়েরা সমুদ্রের কথা বলতে লাগল। ব্যাঙের ছানারা জিজ্ঞাসা করল—”হ্যাঁ বাবা! সমুদ্র কাকে বলে?” ব্যাং খানিক ভেবে বলল, “সমুদ্র? সে একরকম জন্তুর নাম।” তখন একটা ছানা বলল—”ওরা যে বলছিল সমুদ্র খুব ভয়ানক বড় হয়, আর তার মধ্যে অনেক জল থাকে—আর লোকেরা সাঁতার কেটে তা পার হতে পারে না।” তখন কোলাব্যাং মুশকিলে পড়ল। সে গাছপালা দেখেছে, বাড়িঘর দেখেছে—মানুষ কুকুর ঘটি বাটি নানারকম জিনিসপত্র দেখেছে, আর ছেলেবেলায় অনেকরকম জিনিসের গল্প শুনেছে। কিন্তু সমুদ্রের কথা ত কখন শোনেনি! তখন সে ভাবল সমুদ্রের কথা একটু খোঁজ করে দেখতে হবে। পরদিন সকালে উঠেই কোলাব্যাং তার ছাতা পোঁটলা নিয়ে বলল, “আমি সমুদ্রের সন্ধান করতে যাচ্ছি।” তার গিন্নী কত কাঁদল, ছেলেরা নানারকম সুর করে তাকে বারণ করল কিন্তু কোলাব্যাং বলল, “না, এতে আমার জ্ঞানলাভ...

মহিলা ও একটি পোষা বেঁজি

ছবি
নীতি গল্প: না বুঝে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয় মোঃ আসাদুজ্জামান — May 7, 2021 একজন মহিলার একটি পোষা বেঁজি ছিল। বেঁজিটি খুব বিশ্বস্ত ছিলো। একদিন মহিলাটি তার শিশুকে বেঁজিটির তত্ত্বাবধানে রেখে বাইরে গেল। মহিলাটি বাসা থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষন পর একটি কিং কোবরা সাপ বাসায় ঢুকলো। শিশুটি সাপ দেখে ভয়ে কাঁদতে লাগলো। বেঁজিটি সাপটির উপর ঝাপিয়ে পড়লো। অনেকক্ষণ লড়াই করার পর সাপটি মারা গেল। বেঁজিটি রক্তাক্ত মুখ নিয়ে বাসার গেটের সামনে মহিলাটির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। যখন মহিলাটি বাসায় আসলো তখন বেজিটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেল। মহিলাটি ভাবলো বেঁজিটি হয়তো তার শিশুকে কামড়িয়েছে। তিনি একটি পানির পাত্র দিয়ে আঘাত করে বেঁজিটিকে মেরে ফেললো। কিন্তু তিনি যখন ভিতরে প্রবেশ করলেন তখন দেখতে পেলেন, শিশুটির পাঁশে একটি মৃত কিং কোবরা সাপ পড়ে আছে। তখন তিনি ভূল বুঝতে পারলেন। কিন্তু এতোক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে। মৃত বেঁজিটির জন্য চোখের পানি ফেলা ছাড়া তার কিছুই করার ছিল না। শিক্ষা: আমরা অনেক সময় তরিত্‍ সিধান্ত নেই ও ধারনার উপর কাজ করি। তরিত্‍ সিধান্ত ও ধারনার উপর করা কাজের ফলাফলকখনো ভালো হয় না ।

শিকারি ও বুদ্ধিমান পাখি

ছবি
শিক্ষণীয় গল্প: শিকারি ও বুদ্ধিমান পাখি মোঃ আসাদুজ্জামান — March 8, 2021 একবার এক শিকারি ছোট্ট একটি পাখি ধরে ফেলল। পাখিটি খুব বুদ্ধিমান ছিল। পাখিটি শিকারির খুব প্রশংসা করতে লাগল যে, তুমি এতবড় শিকারি! জীবনে অনেক বাঘ মেরেছ, অনেক ভাল্লুক মেরেছ, এই করেছ, সেই করেছ। আমি একটা ছোট্ট পাখি, আমার ওজন ১০০ গ্রামও না, আমাকে খেয়ে তুমি কী করবে? আমাকে খেলে তো তোমার পেটের একটা কোনাও ভরবে না। তার চেয়ে বরং আমাকে ছেড়ে দাও। তোমাকে এমন তিনটি মূল্যবান বাণী শোনাব যা তোমার সারাজীবন কাজে লাগবে। এমনভাবে সে কথাবার্তা বলছিল যে শিকারির মন গলে গেল। কারণ তেল পেতে সবাই পছন্দ করে। আরেকজনকে গলানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে তেল। সে ভেবে দেখল, ঠিকই তো। এত ছোট পাখি খেয়ে কোনো লাভ নেই। তার চেয়ে শুনি, পাখিটা কী বলতে চায়। হয়তো এতে আমার লাভ বেশি হবে। শিকারি রাজি হওয়ায় পাখিটি বলল, আমি প্রথম বাক্যটি বলব তোমার হাতের ওপর বসে, দ্বিতীয় বাক্যটি বলব এই গাছের ডালে বসে, তৃতীয় বাক্যটি বলবো গাছের মগডালে বসে। শিকারি বললো, ঠিক আছে। পাখি বলল, ‘কখনো অলীক কল্পনা কর না, যা অবাস্তব সেটা কখনো বিশ্বাস কর না’। শিকারি বলল, খুব ঠিক কথা। সত্যিই...

কৃষক ও গাধার গল্প

ছবি
গাধা ও কৃষকের একটি শিক্ষণীয় গল্প! মোঃ আসাদুজ্জামান — May 18, 2020 একদিন এক কৃষকের গাধা অগভীর কুয়ায় পড়লো। কিন্তু কুয়াটার গভীরতা গাধার উচ্চতা থেকে বেশি হওয়াতে অবলা প্রাণীটি উঠে আসতে পারছিল না। গাধার ত্রাহি চিৎকারে কৃষক এবং আশপাশের মানুষ ছুটে আসল। কিন্তু ওরাও বুঝে উঠতে পারল না কী করবে। ঘণ্টা খানেক নানা ভাবে চেষ্টা করার পরও যখন গাধাকে উপরে তুলে আনা গেল না,কৃষক তখন চিন্তা করল, কুয়াটা আগে থেকেই বিপজ্জনক। বেশ কয়েকটি বাচ্চা কুয়াতে পড়ে বারবার আহত হয়েছে। কুয়াটা এমনিতেই ভরাট করতে হবে, তার উপর গাধাটা অনেক বুড়ো এবং দুর্বল হয়ে গেছে। তাই কৃষক সিদ্ধান্ত নিল গাধাসহ কুয়াটি ভরাট করে ফেলবে।   কৃষক সবাইকে ডাক দিয়ে হেল্প করতে বলল। সবাই হাতে বেলচা এবং কোদাল নিয়ে পাশ থেকে মাটি কেটে কুয়াতে ফেলতে লাগল। কিছু মাটির দলা গিয়ে গাধাটির উপরেও পড়ল। ওদের মাটি ফেলা দেখে গাধাটি বুঝতে পারল কি ঘটতে চলেছে, প্রাণীটি ভয়ে-দুঃখে নিরবে কাঁদতে লাগল। কিছুক্ষণ মাটি ফেলার পরে সবাই হঠাৎ চমকে গেল, কারণ গাধাটি অদ্ভুত একটা কাণ্ড করে বসেছে। সবাই যখন গাধার উপরে মাটি ফেলছে,গাধাটি তখন গা-ঝাড়া দিয়ে মাটি নিচে ফেলে দিচ্ছে এবং এক-পা, এক- পা ...
ছবি
একটি শিক্ষনীয় গল্প এক মিনিট সময় নিয়ে হলেও সবাই পড়বেন উপকৃত হবেন!! একবার এক রাজা তার তিন মন্ত্রীকে ডেকে বললেন,এই নাও তোমাদের একটা করে খালি বস্তা দিলাম।তোমাদের কাজ হবে বনে গিয়ে বিভিন্ন ফল কুড়িয়ে এই বস্তা ভরে নিয়ে আসবে,দেখি কে কত তাড়াতাড়ি বস্তা পূর্ণ করে নিয়ে আসতে পার।তিন জন চলে গেল জঙ্গলে। ✡️১ম মন্ত্রী চিন্তা করলো,রাজা বলেছেন তাই ভালো ভালো ফল কুড়িয়ে বস্তা পূর্ণ করি এবং সেই মত জঙ্গলের ভালো ফল কুড়িয়ে বস্তা ভরে ফিরে আসল। ✡️২য় মন্ত্রী চিন্তা করলো,রাজা তো সব ফল দেখবেন না তাই হাবিজাবি পচা ফল দিয়ে সে নীচের দিকে পূর্ণ করে,উপরের দিকে শুধু কিছু ভালো ফল দিয়ে বস্তা পূর্ণ করলো এবং ফিরে আসল। ✡️৩য় মন্ত্রী চিন্তা করলো,রাজার এত সময় কোথায় বস্তা খুলে খুলে দেখবে,সে শুধু দেখবে বস্তা পূর্ণ হয়েছে কিনা।জঙ্গলে মরা পাতা,ঘাস,কাঠ দিয়ে বস্তা পূর্ণ করে নিয়ে এলো । তিন মন্ত্রী রাজার দরবারে হাজির,রাজা সবার বস্তা পূর্ণ দেখে খুশী হলেন।তিনি বস্তাগুলো খুলেও দেখলেন না।৩য় মন্ত্রী নিজের বুদ্ধির কথা চিন্তা করে নিজেকে বেশ বুদ্ধিমান মনে করতে লাগলো। রাজা একটু সময় নিয়ে তার মসনদে বসলেন এবং ঘোষণা করলেন,এই তিন মন্ত্রীদের তাদের ব...

ভাগাভাগি – জসীম উদ্দীন

ছবি
মোঃ আসাদুজ্জামান — February 18, 2022 'ভাগাভাগি' জসীম উদ্দীন বাপ মরে গিয়েছে। দুই ভাই আলাদা হবে। বড়ভাই ছোটভাইকে বলল, “দেখ, আমাদের একটিমাত্র গাই (গাভী) আছে, কেটে তো আর দুই ভাগ করা যাবে না। তুই ছোটভাই। তোকেই গাই’র বড় ভাগটা দেই। তুই তাহলে গাই’র মুখের দিকটা নে। আর আমি গাই’র লেজের দিকটা নেই।” ছোটভাই ভারি খুশি! বড়ভাই যে তাঁকে ভাল ভাগটা দিয়েছে, সেজন্য সে বড় ভাইয়ের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। সে সারাদিন এখান হতে ওখান হতে ঘাস কেটে এনে গাইটাকে খাওয়ায়। আর ওদিকে বড়ভাই রোজ সকালে হাঁড়ি ভরে দুধ দোয়ায়। সেই দুধ দিয়ে ছানা বানায়, ছানা দিয়ে রসগোল্লা বানায়, সন্দেশ বানায় আরও কত কি বানায়! বড়ভাই ভারি খুশি, “বেশ আমার ছোটভাই। এমনিই তো চাই। এবার বুঝতে পারলাম, বাপের সম্পত্তি তুমি ঠিকই রক্ষা করতে পারবে। তোমার ভাগে যখন গাইর মুখের দিকটা পড়েছে, তখন নিশ্চয়ই তোমাকে ভালমতো তাকে খাওয়াতে হবে।”   বড়ভাইর তারিফ শুনে ছোটভাই আরও বেশি করে গরুকে ঘাস দেয়। বড়ভাই আরও বেশি করে গরুর দুধ দোয়ায়; আর ছোটভাইকে আরও বেশি করে তারিফ করে। একজন চালাক লোক একদিন ছোটভাইকে বলল, “আরে বোকা! তুই গরুর মুখের দিকটা নিয়ে, দিন রাত গরুকে...

একটি ইঁদুর এক চাষী

ছবি
একটি ইঁদুর এক চাষীর ঘরে গর্ত করে লুকিয়ে থাকতো একদিন ইঁদুরটি দেখলো চাষী আর তার স্ত্রী থলে থেকে কিছু জিনিস… একটি ইঁদুর এক চাষীর ঘরে গর্ত করে লুকিয়ে থাকতো। একদিন ইঁদুরটি দেখলো চাষী আর তার স্ত্রী থলে থেকে কিছু একটা জিনিস বের করছেন। ইঁদুর ভাবলো থলের ভিতর নিশ্চয়ই কোনো খাবার আছে, তাই সে গুটি গুটি পায়ে এগোলো। এগিয়ে দেখলো সেটা খাওয়ার কিছু নয়, সেটা ছিল একটা ইঁদুর ধরার ফাঁদ। ফাঁদ দেখে ইঁদুর পিছোতে থাকলো। ইঁদুরটি বাড়ির পিছনের এক খোপে থাকা পায়রাকে গিয়ে বলল- জানো আজ বাড়ির মালিক একটা ইঁদুর ধরার ফাঁদ এনেছে। এটা শুনে পায়রা হাসতে থাকলো আর বলল- তাতে আমার কি? আমি কি ওই ফাঁদে পড়তে যাব না কি? নিরাশ হয়ে ইঁদুরটি মুরগীকে গিয়ে এই কথা বলল।   মুরগী ইঁদুরকে হেয় করে বলল- যা ভাই এটা আমার সমস্যা নয়। ইঁদুরটি হাঁপাতে হাঁপাতে মাঠে গিয়ে ছাগলকে শোনালো। ছাগল শুনে হেসে লুটোপুটি আর ঘাস খেতে থাকলো। সেই দিন রাত্রে একটি শব্দ হলো যাতে একটি বিষাক্ত সাপ আটকে গিয়েছিল।অন্ধকারে চাষীর স্ত্রী সাপের লেজকে ইঁদুর ভেবে বের করলো, আর সাপটি তাকে কাঁমড়ে নিল। অবস্থা খারাপ দেখে চাষীটি ওঝাকে ডাকলো। ওঝা তাকে পায়রার জুস খাওয়ানোর পরামর্শ দিল। **...

দৈত্য ও নাপিত – মজার গল্প মোঃ আসাদুজ্জামান — February 14, 2022

ছবি
Dotto and Napith এক গায়ে ছিল এক জন্ম-কুঁড়ে নাপিত। সে ছিল অকর্মার ধাড়ী। কোন কাজে তার মন বসত না। তার কাজ ছিল একটাই। নিজের পুরনো আয়নাখানা আর দু’চারখানা দাতপড়া কাঁকই (চিরুনি) দিয়ে নিত্যক্ষণ নিজের মুখসৌন্দর্য ও চুলের বাহার দেখে পরম সন্তোষ লাভ করা। বাড়িতে তার একমাত্র বুড়া বিধবা মা। তারা গরিব মানুষ, সংসার চলে না। পৈত্রিক পেশায় মন লাগালে সংসারের দুঃখ দূর হয়। কিন্তু ছেলে কাজকর্মের ধারেকাছেও নেই। মা হতাশ হয়, দুঃখ করে। অন্য ভাল ছেলেদের নজির দেখায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ছেলে তার স্বভাব থেকে একচুলও নড়ে না। অনেক ভেবেচিন্তে মা ছেলের বিয়ে দেয়। আশা, এতে ছেলের সংসারের মন ফিরবে। কিন্তু কিসের কি! বউ সংসার নাপিতের মন পায় না। সে ব্যস্ত থাকে তার পুরনো অভ্যাস নিয়ে। তাতেই তার দুনিয়ার আনন্দ, নিদারুণ পুলক। খেউরি করার (চুল কাটার) যন্ত্রপাতিতে জং ধরে। একটা জমিতে ধান হয়েছে সেগুলো সে কেটে ঘরে তুলবে তাতেও তার প্রবল অনিচ্ছা। তো, নাপিতের মা অবশেষে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে ছেলেকে ঝটাপেটা করে একদিন। এই বার নাপিতের মনে লাগে। সে ঘর ছেড়ে বেরোয়। একটা কিছু করে অনেক টাকাকড়ি ধনরত্ন কামাতে না পারলে সে আর বাড়িমু...